সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক : সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক নরসিংদীর বোয়াকুড় গ্রামে ১৯৪১ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর বাবা মোল্লা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, মা নুর খাতুন বেগম। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। ‘শেষ উপহার’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত তাঁর রচিত ও সুরারোপকৃত ‘চিরদিন তোমাকে ভালোবেসে যাব’ গানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন । গান রচনার পাশাপাশি তিনি অসংখ্য নাটকও রচনা করে গিয়েছেন, এসব নাটকের বেশকিছু মঞ্চায়িতও হয়েছে। তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। শৈশবে ১২০ টাকা বেতনে শহরের একটি রুটির বেকারিতে চাকরি নেন। এরপর শহরের জবা টেক্সটাইল মিলে পিয়ন হিসেবে যাত্রা শুরু করে শ্রমিকনেতায় পরিণত হন। ১৯৬৮ সালে শ্রমিকনেতা হিসেবে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নানা আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নরসিংদী অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন এবং পরে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে নরসিংদী পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং একই বছর তিনি ‘প্রতিভা শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাক ১৯৭৯ সালে ইউনাইটেড পিপলস পার্টিতে (ইউপিপি) যোগদান করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলেও পরের বছর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দিয়েছিলেন । ১৯৮৪ সালে তিনি নরসিংদী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপিদলীয় প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে চারবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। নরসিংদী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এছাক তাঁর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ‘আরশিনগর বটমূল’ এবং ‘আরশিনগর পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা’ নামের দুটি নান্দনিক প্রতিষ্ঠান, যার সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান। সাপ্তাহিক ‘আরশীতে মুখ’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি। সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক একজন রাজনীতিবিদ হলেও আমৃত্যু বাউল- ফকির-সুফি-দরবেশদের সংস্পর্শে থেকে গানের চর্চা করে গেছেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক সংগীত একাডেমি’র মাধ্যমে এছাকের অনুরাগী-শিষ্য শুভানুধ্যায়ীরা নরসিংদীতে এখনও এছাকগীতি চর্চা ও প্রচার করে চলেছেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তিনি ২০০৫ সালের ২৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন ।
সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক
Category: বাউল বৃত্তান্ত