দীন শরৎ : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সাজিউড়া গ্রামে ১৩১০ বঙ্গাব্দে জন্ম। তাঁর বাবার নাম কুটীশ্বর দেবনাথ। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়েই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। শৈশবে মাকেও হারান। নয় বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ফলে দুঃখ-কষ্ট সঙ্গী করেই বড় হয়েছেন। অন্ধ হওয়ার আগে গ্রামের পাঠশালায় সামান্য পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর রচিত আত্মজৈবনিক গান ‘গুরু উপায় বলো না’ শীর্ষক গানটি একসময় মানুষের মুখে মুখে ফিরত। এ গানটি এ-রকম : ‘গুরু উপায় বলো না/ জনমদুখী কপাল পোড়া/ আমি একজনা / গিয়াছিলাম ভবের বাজারে/ ছয় চোরা করলো চুরি/ শুরু বাঁধল আমারে 1/ ছয় চোরা খালাস পাইলো গো / গুরু-আমায় দিলো জেলখানায় / শিশুকালে মইরা গেল মা/ গর্ভে থুইয়া পিতা মইল চোখে দেখলাম না/ আমায় কে করিবে লালন-পালন গো/ কে দিবে আজ সান্ত্বনা ॥ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিবাহিত, তবে তাঁর স্ত্রীর নাম জানা যায়নি। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর আসল নাম শরৎচন্দ্র দেবনাথ হলেও দীন শরৎ নামে অসংখ্য তত্ত্বমূলক গান লিখে পরিচিতি পেয়েছেন। নিজ জেলার বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরে গান গাইতেন তিনি বৈঠকী গানে একজন যশস্বী শিল্পী ছিলেন। মুখে মুখে রচনা করছেন অসংখ্য গান। যা এখনও পল্লি অঞ্চলের মানুষেরা গেয়ে থাকেন । তিনি একসময় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বিশ্বলং আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সাহচার্যে আসেন এবং বৈষ্ণব ধর্মে প্রভাবিত হয়ে অসংখ্য ভক্তিমূলক গান রচনা করেন। এর বাইরে তাঁর অধিকাংশ গানে গুরু-শিষ্যের প্রশ্নোত্তর লক্ষ করা যায়। মনঃশিক্ষা, পরমতত্ত্ব, আত্মা-পরমাত্মার ভেদাভেদ, রহস্যসংকুল জীবন-মৃত্যু, পরমপুরুষ, রজঃ-বীর্য পঞ্চতত্ত্ব, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, মনের মানুষের অনুসন্ধান, বসুধারণ- এসব নানা বিষয়ে শিষ্যের সুস্পষ্ট উত্তর জানার আকুলতা শরতের গানে রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে গবেষক গুরুসদয় দত্ত একবার ময়মনসিংহের জেলা হাকিম ছিলেন, তখন এক বাউলগানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দীন শরৎ সোনার মেডেল উপহার পেয়েছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গানের সংকলনগুলো হচ্ছে : দীন শরতের বাউল গান, দীন শরতের এসলাম সঙ্গীত। তাঁর গানের প্রচার ও প্রসারে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকার ও তাঁর ছোট ভাই পবিত্ররঞ্জন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । ১৩৭০ বঙ্গাব্দে তাঁর মৃত্যু হয় ।
দীন শরৎ
Category: বাউল বৃত্তান্ত