রশিদ উদ্দিন : নেত্রকোনা পৌরসভার বাহিরচাপড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে ১৮৮৯ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম। তাঁর বাবা মশ্রব উদ্দিন, মা ফজর বানু। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর দাদা আজম মোড়ল ছিলেন একজন নামকরা কুস্তিগীর ও পালোয়ান ছোটবেলা থেকেই গান তাঁকে টানত। সেই গানের টানে ১৫/১৬ বছর বয়সে পাশের গ্রাম পুকুরিয়ার বৈষ্ণব ভক্ত টকন মিস্ত্রী ও দীনমাঝির সান্নিধ্যে এসে বাউল গান শেখা শুরু করেন। ১৯০৯ সালে লেংটা শাহের শিষ্যত্ব নিয়ে নিজের বাড়িতে গানের জলসায় মেতে ওঠেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবিগানের আসরেও তিনি তখন অংশ নেওয়া শুরু করেন। তাঁর সংগীত সাধনার ওস্তাদ ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি এলাকার লেংটা পীর। ২০ বছর বয়সে তিনি তাঁর কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। রশিদ উদ্দিন বাউলগান ছাড়াও কবিগান ও মালজোড়া গানের জন্যও প্রখ্যাত ছিলেন। তিনি মালজোড়া গানের প্রবর্তকও ছিলেন । পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সুরকার, বাউলতত্ত্বের প্রশিক্ষক, দক্ষ বংশিবাদক ও লোকনাট্য অভিনেতা। ১৯২৯ সালে স্বররাজ লহড়া নামে তাঁর একটি গানের সংকলন প্রকাশিত হয়। এ সংকলনের বাইরে তাঁর আরও অনেক প্রচলিত- অপ্রচলিত গান লোকমুখে রয়েছে। তাঁর দুই স্ত্রী ছিলেন, এঁরা হলেন দৌলতেরন্নেছা ও আমিরজান বিবি তাঁর প্রথম পক্ষের দুই ছেলে এবং দ্বিতীয় পক্ষের চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছেন । তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উকিল মুনশি, জালাল উদ্দীন খাঁ, মিরাজ আলী, আব্দুল মজিদ তালুকদার, শাহ আবদুল করিম, আলী হোসেন সরকার, আবেদ আলী, চান মিয়া, আব্দুল বারেক অন্যতম। তিনি ১৯৬৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন ।
রশিদ উদ্দিন
Category: বাউল বৃত্তান্ত