রাধারমণ দত্ত : ১৮৩৪ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে জন্ম। তবে তাঁর জন্মসাল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তিনি ১৮৩৩ সালে জন্মগ্রহন করেছেন বলেও কোনো কোনো গবেষক জানিয়েছেন। তাঁর বাবা রাধামাধব দত্ত পুরকায়স্থ, মা সুবর্ণা দেবী। রাধামাধব দত্ত বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে কৃষ্ণলীলাকাব্য, পদ্মপুরাণ, ভারতসাবিত্রী, ভ্রমরণীতা, সূর্যব্রত, গোবিন্দভোগের গান, জয়দেবের গীতগোবিন্দের সহন্দ টীকা উল্লেখযোগ্য। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাধারমণ ছিলেন কনিষ্ঠ। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতাকে হারান। শৈশবেই তিনি ছিলেন তত্ত্বজিজ্ঞাসু। জ্যেষ্ঠভ্রাতারা তাঁকে কলকাতায় টোলে ভর্তি করালেও প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যার্জনে তাঁর মোটেই আগ্রহ ছিল না। আর তাই একদিন সেই টোল ত্যাগ করে তিনি কৃষ্ণদাস বিরচিত শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থটি সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এটা ছিল তাঁর প্রিয় পুস্তক। রাধারমণ ১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার আদিপাশা গ্রামের নন্দকুমার সেন অধিকারীর মেয়ে গুণময়ী দেবীকে বিয়ে করেন। রাধারমণ ও গুণময়ীর চার ছেলে- যথাক্রমে রাসবিহারী, নদীয়াবিহারী, বিপিনবিহারী ও রসিকবিহারী। কাছাকাছি সময়ের ব্যবধানে রাধারমণের স্ত্রী ও তিন ছেলে মারা গেলে তিনি অসহায় বোধ করেন । তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় পঞ্চাশ । এই সময়টাতে মৌলভীবাজারের ঢেউপাশা গ্রামের সাধক রঘুনাথ ভট্টাচার্যের (১২০৩-১২৯৪ বঙ্গাব্দ) কাছে দীক্ষা নেন। এরপর নিজ বাড়ির পাশে নলুয়া হাওরের নির্জন স্থানে সাধনার স্থান হিসেবে বেছে নেন । চমৎকারমঞ্জরী ছিলেন তাঁর সাধনসঙ্গিনী। প্রায় দেড় হাজার গান তিনি মুখে মুখে রচনা করেছেন বলে বিভিন্ন গবেষকেরা জানিয়েছেন। তাঁর প্রধান শিষ্য- শিষ্যাদের মধ্যে লোকনাথ দাস, জগন্নাথ, পরমানন্দ, ব্রহ্মানন্দ, উদ্ভব দাস, জগন মালাকার, হরমণি মালাকার, ইন্দ্ররানি দাস, চন্দ্রাবলী দাস প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন । তিনি ১৯১৬ সালে (১৩২২ বঙ্গাব্দের ২৬ কার্তিক) মৃত্যুবরণ করেন।
রাধারমণ দত্ত
Category: বাউল বৃত্তান্ত