লালন । ১৭৭৪ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়ারা গ্রামে জন্ম । তাঁর বাবা মধাব কর, মা পদ্মাবতী তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শৈশবে পিতৃহারা লালন আর্থিক দুরবস্থার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, লালন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে কলা গাছ দিয়ে তৈরি ভেলায় নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পানিতে ভাসতে ভাসতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া গ্রামের পাশে কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে আটকে থাকেন। নদীর পাড়ে তাঁকে পানিতে ভাসতে দেখে এক মুসলিম নারী লালনকে বাড়িতে নিয়ে এসে সেবা-
শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে গেলে মুসলমানের অন্নজল গ্রহণ করার অপরাধে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ঘরে তুলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরিবার ও সমাজ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি পুনরায় ওই মুসলিম নারীর গৃহে ফিরে আসেন এবং বাউলসাধনায় মনোনিবেশ করেন। এরপর থেকে লালন কুষ্টিয়া জেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামেই আখড়া বানিয়ে বসতি স্থাপন করেন ।
লালনের অপার জ্ঞান আর পাণ্ডিত্য দেখে মলম শাহের পরিবার অর্থাৎ এই অগ্রযাকারী নারীর পুরো পরিবারের সদস্যরা তাঁর কাছে দীক্ষা নেন। এর বছর চারেক পর লালন একবার কদিনের জন্য বাইরে যান। কিছুদিন পর তিনি বিশখা ফকিরানী নামে এক মহিলাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলেন। ভক্তরা ওই মহিলার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তাঁকে ভক্তদের ‘গুরু মা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। ধীরে ধীরে লালনের শিষ্যদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে তাঁর গুণ ও নামের মহিমা চারিদিকে প্রচার হতে থাকে। লালনের নামযশের কথা শুনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গান সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। লালনের বেশ গান তিনি সংগ্রহ করে তা বোদ্ধামহলে প্রচারও করেছেন, সেইসঙ্গে লালনের গানের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। লালন প্রায় এক হাজার গান এখনও তাঁর অনুরাগী আর ভাবশিষ্যদের মুখে মুখে প্রচলিত। এসব গান নিয়ে বেরিয়েছে একাধিক সংকলন। লালনের জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি নাটক, চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন ।